,

দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা, বাড়ছে কার্ব মার্কেটের চাহিদা

ডলারের বাজারে অস্থিরতা আবারও বাড়ছে।

ব্যাংক এবং কার্ব মার্কেট উভয় ক্ষেত্রেই ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী।

ব্যাংকে সর্বোচ্চ দর ১২০ টাকা ধরা হলেও বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলো দিচ্ছে ১২৬ টাকা।

কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলারের মূল্য ১২৫ টাকার ঘরে পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতায় ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বছরের শেষে রিজার্ভ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

আইএমএফ ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষে ন্যূনতম ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ রাখতে হবে।

এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে।

এ পদক্ষেপ ডলারের বিনিময় হার বাড়ানোর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংকগুলো উচ্চমূল্যে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি দামে ডলার কেনা ব্যাংকগুলোর এমডিকে তলব করেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “এলসি দায় পরিশোধের চাপ এবং আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে।”

ডলার সংকট মোকাবিলায় কিছু ব্যাংক উচ্চমূল্যে ডলার কিনছে।

কার্ব মার্কেটে ডলারের অস্থিরতা

ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর কার্ব মার্কেটেও স্পষ্ট।

সেখানে প্রতি ডলার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকার বেশি দামে।

কার্ব মার্কেটের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ রেমিট্যান্সের বড় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সিন্ডিকেট।

ছোট রেমিট্যান্স হাউজগুলো ডলারের মূল্য বাড়িয়ে তুলছে।

ডিসেম্বরের চাহিদা বৃদ্ধি এবং বিদেশি পর্যটকদের মুদ্রা সংগ্রহও কার্ব মার্কেটে প্রভাব ফেলছে।

কিছু নেতাকর্মী বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করায় ডলার কেনার প্রবণতা বেড়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ জানান, “জ্বালানি খাত এবং নিত্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধির প্রভাবেও চাহিদা বাড়ছে।”

আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের সাম্প্রতিক অবস্থা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশের আমদানি খরচ হয়েছে ২২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

এ সময় আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ।

অন্যদিকে, রেমিট্যান্স এসেছে ১১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।

রফতানিতেও ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রেমিট্যান্স এবং রফতানি প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ডলারের বাজার অস্থির।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করার পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বেড়েছে।

ডলারের চাহিদা মেটাতে রেমিট্যান্স এবং রফতানি আয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

রিজার্ভ সংকট এবং আইএমএফের চাপ

দেশে রিজার্ভে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, তা এখন কমে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

বিপিএম৬ মানদণ্ড অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিট রিজার্ভ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তবে আইএমএফের শর্ত পূরণে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভ বাড়িয়ে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে হবে।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টা এবং আমদানি খাতের চাপ ডলার বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত রেখেছে।

আরও পড়তে পারেন