,

দেশে গড় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে, মধ্যবিত্তেরও হিমশিম

বাংলাদেশে গত তিন বছর ধরে গড় মজুরির তুলনায় গড় মূল্যস্ফীতি বেশি।

এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য গভীর সংকট তৈরি করছে।

মূল্যস্ফীতি বাড়লেও আয় বাড়েনি সেভাবে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৮৬ শতাংশ এবং মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৯২ শতাংশ।

কিন্তু ২০২৩ সালের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৩৮ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার হয়েছে মাত্র ৮.১০ শতাংশ।

অর্থাৎ, মানুষের আয় বাড়লেও তার তুলনায় ব্যয় বেশি বেড়েছে।

নভেম্বরে জীবনযাপনের খরচের বৃদ্ধি দেখাচ্ছে যে ২০২২ সালের তুলনায় এক বছর পরে ১০০ টাকার পণ্য কিনতে খরচ বেড়ে হয়েছে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা।

গ্রাম ও শহরের ১৪৫টি পেশার ওপর বিবিএসের এই হিসাব।

এর মানে হলো, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় মানুষ খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচে কাটছাঁট করছে।

খাদ্য তালিকায় সংকট, পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি

খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১৩.৮০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪.১০ শতাংশ ছুঁয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবু তোরাব এম এ রহিম বলেন, “যথাযথ পুষ্টি না পেলে মানুষের কর্মক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা বাড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষের এনার্জি চাহিদা পূরণ না হলে শরীর অন্যান্য পুষ্টি ব্যবহার করতে দেয় না। এতে বিশেষ করে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।”

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার মাছ-মাংসের পরিবর্তে শাক-সবজিতে নির্ভর করছে।

তবে শীতের মৌসুমেও সবজির দাম কম না থাকায় মানুষ পুষ্টিকর খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।

মধ্যবিত্তেরও সংকট: ‘ভোগপ্রবণতাকে ছেড়ে দিয়েছি’

মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও এই পরিস্থিতি ক্রমশ চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার ঝিগাতলার বাসিন্দা উচ্ছাশ হাওলাদার জানান, ২৫ হাজার টাকার বেতনে পরিবারের খরচ চালানো এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

“আগে প্রতি মাসে অন্তত ৫ কেজি মাংস কিনতাম, এখন কিনছি মাত্র ২ কেজি,” বলেন তিনি।

বাসা ভাড়া, ওষুধ, স্কুলের খরচ সামলে মাসের শেষে আর কিছুই বাকি থাকে না।

উচ্ছাশ বলেন, “মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, আমরা তাতে অভ্যস্ত হয়েছি। কিন্তু পেট তো মানে না।”

এই পরিস্থিতি কেবল উচ্ছাশের নয়; শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত অধিকাংশ পরিবারের একই গল্প।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মানুষ এই সংকট থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

আরও পড়তে পারেন