দেশে খাদ্যশস্য মজুদের ঘাটতি: উদ্বেগ এবং করণীয়

বর্তমানে দেশে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় দুই লাখ টন কম।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, এই মুহূর্তে খাদ্য মজুদ রয়েছে মোট ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৭২৩ টন।

এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৮ টন এবং গম ৯০ হাজার ৯৪৫ টন।

গত বছরের এই সময় খাদ্য মজুদ ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন।

এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন।

অর্থাৎ, চাল এবং গম উভয়ই মজুদে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা যাচ্ছে।

খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ

সরকার খাদ্য মজুদ বাড়াতে ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

দুই লাখ টন চাল ও গম কেনার জন্য দুটি জাহাজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে আরও সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া আমদানি করা চাল-গমের বড় অংশ শিগগিরই পাইপলাইনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকার বন্যায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা নাকচ করে কৃষি বিভাগের আশ্বাসকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

খাদ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, মজুদ বাড়াতে নতুন গুদাম নির্মাণ এবং বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

সাইলো গুদামের নির্মাণ এবং সমস্যা

দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে, যার প্রতিটিতে ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ করা যাবে।

তবে এই সাইলো গুদামগুলোর মধ্যে কিছু নির্মাণের স্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে পরিবহন ব্যয় অত্যধিক।

সাধারণত এসব সাইলো নদীপাড় বা রেলপথসংলগ্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়।

তবে মধুপুরে গুদামটি এমন একটি জায়গায় নির্মিত যেখানে কেবল ট্রাকের মাধ্যমে খাদ্য পরিবহন সম্ভব।

ময়মনসিংহের সাইলোতেও একই সমস্যার কথা উঠে এসেছে, যদিও সেখানে পরে রেলপথ টানা হয়েছে।

এই সাইলোগুলো কার্যকর হলে মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে চাল ও গমের চাহিদা এবং আমদানি

বাংলাদেশে বছরে তিন কোটি ৭৫ লাখ টন চাল এবং ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে।

সরকারের সহায়তা ও কৃষকের উদ্যমের কারণে দেশে চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে।

তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো বছর চালের ঘাটতি দেখা দিলে তা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

চলতি বছরে দেশে ১০ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে, যেখানে বাকি ৬০ লাখ টন আমদানি করতে হয়েছে।

সরকার খাদ্যশস্য আমদানি সহজ করতে কর এবং শুল্ক তুলে নিয়েছে, যা বেসরকারি আমদানিকারকদের উৎসাহিত করছে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েও চাল-গম সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিকল্প আমদানি উৎস খুঁজে রাখার নীতি অনুসরণ করছে।

মজুদ বাড়ানোর সক্ষমতা নিয়ে আশাবাদ

বর্তমানে দেশের খাদ্যশস্য মজুদ রাখার সরকারি সক্ষমতা ২২ লাখ টন।

সরকার এই সক্ষমতা বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।

এটি করতে বিদেশি দাতাসংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

খাদ্য উপদেষ্টার মতে, বড় কোনো সংকটের আশঙ্কা না থাকলেও মজুদ পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুদাম নির্মাণ ও মজুদ ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়তে পারেন