অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি বিশদ হিটলিস্ট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সিআইডি, বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এসটিএআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
তালিকায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রীরা, শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিক এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা। দুদক বলছে, এই তালিকাটি তাদের বহুল পরিমাণ অর্থপাচারের তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
হিটলিস্টের প্রাথমিক তথ্য: কারা রয়েছেন শীর্ষে?
দুদকের তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নাম।
বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানসহ তার পরিবারের সকল সদস্যও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও সিকদার গ্রুপের দুই ভাই রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, তাদের মা মনোয়ারা সিকদার এবং বোন পারভীন হক সিকদারও রয়েছেন।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, তার স্ত্রী ও মেয়ে, এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামও তালিকায় রয়েছে।
ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোতে সংশ্লিষ্টতা
দুদকের তালিকায় থাকা আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম। তার স্ত্রী আরজুদা করিম এবং ছেলে-মেয়ের নামও রয়েছে।
জেমকন গ্রুপের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদের সন্তানদের মধ্যে কাজী আনিস আহমেদ, কাজী নাবিল আহমেদ, এবং কাজী ইনাম আহমেদের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে।
রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ এবং এর চেয়ারম্যান জাহান বক্স মণ্ডল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ।
হিটলিস্টে সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারাও
দুদকের তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নাম যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের নামও রয়েছে।
তালিকায় আরও রয়েছে পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফতের নাম।
রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তালিকায় রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস।
তথ্যমতে, অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে।
ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মাধ্যমে অর্থপাচার
বেক্সিমকো, সামিট এবং ওরিয়ন গ্রুপের মতো বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে দেশের সম্পদ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্তে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, এবং সিঙ্গাপুরে এসব অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে।
তদন্তে দুদকের ভূমিকা
দুদক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে।
দুদক বলছে, এ তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পত্তির উৎস ও অবৈধ লেনদেনের তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী?
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক।
দুদক জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরও অন্তত ১০০ জনের নাম যুক্ত হতে পারে।
তালিকার পরবর্তী ধাপে আরও সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে দুদক জানিয়েছে।