রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে তৎপর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা ৮০টিরও বেশি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষে এই দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবীরা বলেন, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য দায়ের করা হয়েছে। তাদের দাবি, মামলা দ্রুত প্রত্যাহার না করা হলে আইনজীবী সমাজ আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানানো হয়, প্রয়োজনে তারা আন্দোলনের পথে নামবে এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করবে।
গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, “বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপি এবং তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই সময়ে বিএনপি, ছাত্র জনতা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি একত্রে লড়াই করেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এসব মামলার কোনোটিরই আইনি ভিত্তি নেই।”
তিনি আরো বলেন, “ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলার রায় দেয়া হয়েছে। এই মামলাগুলি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিএনপি মনে করছে, সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া হলে তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, “সরকারের মেয়াদ ইতিমধ্যেই দুই মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলি প্রত্যাহারের কোনো অগ্রগতি নেই। যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততার সঙ্গে গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে এবং একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।”
আদালতের ভূমিকা এবং বিচারকের শপথ ভঙ্গের অভিযোগ
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ আদালতের অনেক বিচারক তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং কোড অব কন্ডাক্ট লঙ্ঘন করেছেন। এই বিচারকদের অপসারণের দাবিতে বিএনপি এবং আইনজীবী ফোরাম একমত।
সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে আমরা সবসময়ই সক্রিয়। আইনজীবী ফোরামের দাবি এবং আন্দোলন দেশের বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”
আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা
বিএনপির আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। কারণ, মামলাগুলি শুধুমাত্র তাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য দায়ের করা হয়েছে।
তারা মনে করেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য তারেক রহমানের অবদান উল্লেখযোগ্য এবং বর্তমান সময়ে তাকে হয়রানি করা হলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়বে।
তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে ফেরা
বিএনপির আইনজীবীরা আভাস দিয়েছেন যে, মামলা প্রত্যাহার করা হলে আগামী বছরের শুরুতেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। তার দেশে ফেরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, মামলা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভূমিকা পুনরায় সক্রিয় হবে এবং তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে জানানো হয়েছে, তারা শুধু তারেক রহমানের মামলার সমাধান চান না, বরং তারা বর্তমান ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চান। তাদের দাবি, ২০১৪ সালের জুলাই গণহত্যার আসামি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের বিচার হওয়া উচিত।
সংবিধান এবং বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠনের আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবীরা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ও বিচারিক ব্যবস্থায় যেসব ত্রুটি রয়েছে, সেগুলি দূর করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সুষ্ঠু এবং কার্যকর নির্বাচনী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র অ্যাডভোকেটরা বলেন, তারা দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি কেমন হবে
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি প্রত্যাহার করার মাধ্যমে সরকারের উপর বিরোধী রাজনৈতিক দলের চাপ কমানো যাবে। তবে, মামলাগুলি প্রত্যাহার করলে সরকারের জন্য একটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, কারণ এর মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানির অভিযোগ আরও প্রমাণিত হতে পারে।
বিএনপির দাবি, মামলাগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলি তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনে বাধা সৃষ্টি করার জন্য দায়ের করা হয়েছে। তারা মনে করেন, যদি মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে দেশের বিচারব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের ওপর মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যাবে।
সমর্থন এবং বিরোধী দলের ভূমিকা
বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইতোমধ্যে তাদের দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবার সরকারের সাথে আলোচনা করেছে। তারা মনে করেন, মামলাগুলি প্রত্যাহার না করা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে এবং সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলা হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং এগুলি দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য হুমকি। আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “আমরা চাই দেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি
বিএনপির আইনজীবী সমাজ বলছে, তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করা হলে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে। এছাড়া তারা রাজনৈতিক হয়রানি এবং বিচারবিভাগের অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা দেশের বিচারব্যবস্থা সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।