রিকশা চালকদের আন্দোলনে স্থবির আগারগাঁও
ঢাকার আগারগাঁওয়ে রাস্তাজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের আন্দোলনে সোমবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
সকালে ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে জীবন আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, “আগারগাঁও চৌরাস্তা বন্ধ করে রিকশাওয়ালাদের আন্দোলন শুরু। এই রাস্তা এড়িয়ে চলুন।”
একই সময়ে আসিফ খান শাওন লিখেছেন, “আগারগাঁও এড়িয়ে চলুন। গুলশান যাওয়ার পথ থেকে ফিরে এলাম। আগারগাঁওয়ের পর যাওয়া যাচ্ছে না।”
সকাল দশটা থেকেই চালকরা তাদের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান নিলে পুরো এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রিকশা চালকদের দাবি ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
তাদের অভিযোগ, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীদের সংখ্যা ও তীব্রতায় তা সম্ভব হয়নি।
ডেমরায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: ব্যাপক উত্তেজনা ও ভাঙচুর
এদিকে, ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ডেমরায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে।
সংঘর্ষের ফলে ডেমরা এলাকার সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, আশপাশের এলাকাগুলোতেও যানজট তৈরি হয়।
গতকাল রবিবার সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীরা দোকানপাট ও বাড়িঘরেও ভাঙচুর চালিয়েছে।
পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করতে হয়েছে।
অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় রাজধানীজুড়ে অচলাবস্থা
অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, যার ফলে নগরজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও কল্যাণপুরে রিকশা চালকদের আন্দোলন রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অচল করে দিয়েছিল।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রাস্তায় নেমে সড়ক ও ট্রেনপথ অবরোধ করে।
এ ঘটনার পর নিউমার্কেট এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
এই ধারাবাহিক অস্থিরতার মধ্যে গতকাল রবিবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
একই রাতে তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ও বুটেক্স শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যা রাত দুইটা পর্যন্ত চলেছিল।
সামাজিক মাধ্যমে উদ্বিগ্ন মানুষের পোস্টের ঢল
সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ট্রাফিক আপডেট গ্রুপে ঢাকার রাস্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের পোস্টের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
লরনা জেসিকা ডি মন্টে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, “মগবাজার থেকে টঙ্গীর রাস্তায় কোনো ঝামেলা হচ্ছে?”
আরেকজন, শুভজিৎ সাহা জানতে চান, “ফার্মগেট থেকে নিকুঞ্জে রুট আপডেট জানা দরকার।”
সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় বের হওয়ার আগে সামাজিক মাধ্যমে যানজট এবং সংঘর্ষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, “মানুষের মনে এখন প্রতিদিনই ভীতি কাজ করছে যে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কি না।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যকে বাধা না দিলে দাবি আদায় হয় না- এমন ধারণা থেকে মানুষ আন্দোলনে নামছে।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি: সমাধান কীভাবে সম্ভব?
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আন্দোলনের সংস্কৃতি বন্ধ করা জরুরি।
এটি শুধু জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে না, বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “যৌক্তিক দাবি থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। তবে সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, তারা জনভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তবে তারা সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করারও আহ্বান জানিয়েছে।
ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে কোনো ঘটনা জনজীবনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে।”
দায় কার, সমাধান কী?
ঢাকার রাস্তায় এ ধরনের অস্থিরতা নগরজীবনকে দিন দিন আরও অসহনীয় করে তুলছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিশ্লেষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলার সঠিক প্রয়োগ এবং সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় মানুষের দাবি আদায়ের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
এদিকে, নাগরিকদের সচেতনতা এবং আন্দোলনের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বনের ওপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা সমাধান না হলে ঢাকার নগরজীবন আরও সংকটে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।