ঢাকার মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন হাফেজ কামরুল হাসান।
১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে ছিনতাইকারীরা তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন এবং ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, এ ঘটনায় জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা ঢাকায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
গত পাঁচ মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন।
শেষ ঘটনায় কামরুল হাসানের পাশাপাশি ১৫ ডিসেম্বর মগবাজারে ছিনতাইকারীদের আক্রমণে প্রাণ হারান আরেকজন তরুণ।
ছিনতাইয়ের পরিসংখ্যান: অভিযোগ না জানানোয় প্রকৃত চিত্র অস্পষ্ট
ডিএমপির তথ্য অনুসারে, গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩৪টি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে ছিনতাইকারীদের হাতে একজন নিহত এবং চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
তবে ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ না করায় প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে না।
সম্প্রতি শনির আখড়ায় যানজটে আটকে থাকা একটি ট্রাকে হামলা চালায় ১২-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল।
ছুরিকাঘাতে আহত এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় মামলা হয়নি, যা অপরাধ দমনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে, পুলিশের কার্যক্রম স্থবির
চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৬৫টি মামলা হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে ডাকাতির মামলার সংখ্যা গত বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে।
বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনায় একই সময়ে মামলা হয়েছে ৩৪০টি।
১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বাধিক চুরির মামলা হয়েছে ভাটারা ও শাহবাগ থানায়।
শান্তিবাগ এলাকার একটি বাসায় ১৫ নভেম্বর চুরি হওয়া ১২ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধারে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিদের শনাক্ত করতে পারেনি।
মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে স্থানীয়রা থানার সামনে বিক্ষোভ করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়।
তবে নতুন প্রশাসনিক পদক্ষেপেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চোখে পড়ছে না।
পুলিশি নিরাপত্তার অভাব ও আইনি কার্যক্রমের জটিলতা
ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক ভুক্তভোগী।
পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাতের টহল জোরদার না করলে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বন্ধ হবে না।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী ছিনতাই বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় নাগরিকদের সতর্ক থাকা উচিত।
পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।