মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।
২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই শপথ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমন্ত্রণ পেলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেই তালিকায়।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহ্য ভেঙে এইবার ট্রাম্প তার শপথ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ও ডানপন্থী নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মেলোনি-মিলেই শীর্ষে, অরবান অনুপস্থিত
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের শীর্ষ অতিথি তালিকায় রয়েছেন।
মেলোনি সম্প্রতি ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার–এ–লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাম্প মেলোনিকে ‘দুর্দান্ত নারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান আমন্ত্রিত হলেও ব্যক্তিগত কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন না।
অরবান ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও শপথ অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমন্ত্রিত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেও তার উপস্থিতি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
চীনের কূটনৈতিক নিয়মনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধানদের বিদেশ সফরের জন্য কয়েক মাসের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।
তবে সি চিন পিং উপস্থিত না থাকলেও চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন।
চীনা প্রতিনিধি দলের এই সফর মার্কিন-চীন সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যৎ আলোচনা প্রক্রিয়ার সূচনা করতে পারে।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলো নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা হতে পারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত মার্কো রুবিওর সঙ্গে।
মোদির অনুপস্থিতি ও ভারতের প্রতিনিধিত্ব
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি।
তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে এবং ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া আমন্ত্রিত হয়েছেন।
আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রযুক্তি ও ডানপন্থী ব্যক্তিত্বরা
শপথ অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ উপস্থিত থাকবেন।
ব্রিটেনের ডানপন্থী রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ এবং ফ্রান্সের বিতর্কিত লেখক এরিক জেমোরও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
জার্মান ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির নেতাদের মধ্যে অ্যালিস ভাইদেলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি উপস্থিত হতে পারবেন না।
তবে তার পরিবর্তে দলের আরেক নেতা তিনো ক্রপালা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
স্পেনের ভক্স পার্টির নেতা সান্তিয়াগো আবাস্কাল এবং পর্তুগালের চেগা পার্টির প্রধান আন্দ্রে ভেন্তুরাসহ আরও বেশ কয়েকজন কট্টর ডানপন্থী নেতা আমন্ত্রিত হয়েছেন।
আমন্ত্রিত নন যারা
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এবং ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মেরিন লা পেন আমন্ত্রিতদের তালিকায় নেই।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত জর্দান বারদেলাও আমন্ত্রণ পাননি।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে একদিকে যেমন ডানপন্থী এবং জাতীয়তাবাদী নেতারা আমন্ত্রিত হয়েছেন, অন্যদিকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেতার অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে।
এই ভিন্নধর্মী আমন্ত্রণ তালিকা ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক অগ্রাধিকার কী হতে পারে, সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে।