জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এই প্রস্তাবের খসড়া অনুযায়ী, সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০টি এবং উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি।
নিম্নকক্ষের নির্বাচন বর্তমান পদ্ধতিতে এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা হবে ৫০৫টি।
আগামীকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রস্তাব জমা দেবে কমিশন।
দ্বিকক্ষ সংসদ: নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের কাঠামো
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের জাতীয় সংসদ এককক্ষবিশিষ্ট।
বর্তমান ব্যবস্থায় সংসদে মোট আসন সংখ্যা ৩৫০টি, যার মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন।
নতুন প্রস্তাবে নিম্নকক্ষের জন্য ৪০০টি আসনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১০০টি আসন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
উচ্চকক্ষের জন্য মোট ১০৫টি আসন প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি আসন রাষ্ট্রপতির হাতে মনোনয়নের জন্য রাখা হবে।
উচ্চকক্ষের বাকি ১০০টি আসনে নির্বাচন হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে।
দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী এই আসনগুলো বণ্টন করা হবে।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে
সংবিধান সংস্কার কমিশন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধে দ্বিকক্ষ সংসদ গঠনের প্রস্তাব করেছে।
এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকানোই এই প্রস্তাবের অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে কেউ পরপর তিনবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার সুপারিশও প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত।
নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিশন সংবিধানের মূলনীতিগুলোতেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করছে।
‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’—এই তিনটি মূলনীতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ
নির্বাচনব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচনের সময় ‘না ভোটের’ বিধান যুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রার্থীদের হলফনামায় বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এছাড়া, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করবে কমিশন।
অন্যান্য সংস্কার ও চ্যালেঞ্জ
সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়াও দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনগুলোর সুপারিশ আগামীকাল জমা দেওয়া হবে।
দুদককে আরও স্বাধীন ও কার্যকর করার জন্য কমিশন কিছু মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব করবে।
দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে দলীয় প্রভাব দূর করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
জনবল ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তবে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করাই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।