জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের
,

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর: আন্দোলনকারীদের দায় অস্বীকার, ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জি এম কাদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হামলা-অগ্নিকাণ্ড, রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ অভিযোগ তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ হামলা চালানো হয় বলে জানান তিনি।

চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ছাত্র জনতার ব্যানারে কিছু মানুষ তাদের পার্টি অফিসে হামলা চালায়।

তিনি আরও বলেন, প্রথমবারের হামলা প্রতিহত করার পর আরও সংঘবদ্ধ হয়ে ফের হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এই ঘটনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অফিসের নিচতলা সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং মুখপাত্র উভয়ই নিজেদের দায় অস্বীকার করেছেন।

তারা এটিকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সংগঠনের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নয় বলে দাবি করেছেন।

‘জাতীয় বেইমান’ বলে অভিহিত করে ফেসবুকে পোস্ট

হামলার ঘটনাটি ঘটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর এক ফেসবুক পোস্টের পরপরই।

তিনি জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেইমান’ বলে উল্লেখ করে লিখেছিলেন, দলটি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

সেই পোস্টের পরপরই আরও একদফা মিছিল আসে এবং জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ওই পোস্টে তিনি বলেন, “এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত করতে হবে।”

তার ওই স্ট্যাটাসটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে এবং এটি আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের প্রতীক হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সরেজমিনে কার্যালয়ের পরিস্থিতি

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা ভবনের নিচতলা সম্পূর্ণরূপে পোড়া।

ভবনের সামনের দেয়ালে স্প্রে পেইন্টে লেখা হয়েছে ‘জাতীয় টয়লেট’, ‘পাবলিক টয়লেট’ এবং ‘দালাল’ ইত্যাদি শব্দ।

এরশাদের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে এবং স্প্রে দিয়ে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

বিভিন্ন জায়গায় দলীয় লোগো লাগানো ব্যানারও পোড়া অংশ ঝুলছে।

এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জি এম কাদের এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথমে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি মিছিল জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে আসে।

তারা স্লোগান দেয় এবং দলটির কার্যালয়ের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

তখন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে এসে মিছিলকারীদের ধাওয়া দেয় এবং মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

কিন্তু পরে আরও বেশি লোক সমবেত হয়ে কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

একটি দোকানের কর্মচারী জানান, সন্ধ্যার সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না বলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বক্তব্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, এই হামলা সংগঠনের সিদ্ধান্ত ছিল না।

তিনি দাবি করেন, এটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে করা হয়েছে এবং সংগঠনের ফোরামে আলোচনা হয়নি।

উমামা আরও বলেন, তাদের আন্দোলন আইনের মধ্যে থেকে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশে সচল রাখতে চায়।

তার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এড়িয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হলে বিভিন্ন গ্রুপের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

সদস্য সচিবের বক্তব্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেলও জানান, মিছিলের সিদ্ধান্ত সংগঠনের ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, মিছিল করা অধিকার সবার আছে, তবে ভাঙচুরের উদ্দেশ্য ছিল না।

আরিফ আরও জানান, ফোরামে আলোচনা করে এই ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্ন তুলে উমামা ফাতেমা বলেন, “সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত নিষ্ক্রিয় কেন?”

জাতীয় পার্টির পাল্টা অভিযোগ

জি এম কাদেরের অভিযোগ, এর আগেও জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, গত মাসেও কিছু লোক তাদের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

কাদের জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কিছু ব্যক্তি নাগরিক কমিটিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

তবে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক উত্তাপ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করবে।

কাদেরের এই অভিযোগে জাতীয় পার্টির পক্ষে সমর্থন জোগাতে পারে এবং রাজনীতিতে সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি এই ঘটনার দায়িত্ব এড়াতে না পারে, তবে তাদের ওপরও চাপ বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাটি আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আরও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে থাকবে।

আরও পড়তে পারেন