২০২৫ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে এখনো দিনক্ষণ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিজয় দিবসের ভাষণে বলেন, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে।
এরপর প্রেস উইং থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে জানানো হয়।
তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখনো অস্বস্তিতে রয়েছে।
বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করছে।
সংস্কারের অগ্রগতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে।
কমিশন জানিয়েছে, তারা প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময় অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে সংস্কার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র কেয়ারটেকার নয়, তাদের কাজ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবও বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রম শেষ করেই নির্বাচন দিতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও প্রতিক্রিয়া
বিএনপি ও বাম ঘরানার দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সংকট নিরসনে এই বছরই নির্বাচন দিতে হবে।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংস্কারের নামে গণতন্ত্র বিঘ্নিত করা যাবে না।
জামায়াতে ইসলামীও ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চায়।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার পক্ষে।
তাদের মতে, তাড়াহুড়ো না করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও সময় দেওয়া উচিত।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং রাজনৈতিক বার্তা
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, দেশ কঠিন পথে চলছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোকেই ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারকে সহায়তা করা উচিত।
বিএনপির নেতারা সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
তারা মনে করছেন, এই বক্তব্য সরকারের প্রতি চাপ কমাবে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।
এদিকে, সেনাপ্রধানের বক্তব্য নির্বাচনী সময়সীমা নিয়ে নতুন আশা জাগিয়েছে।
নির্বাচন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, ২০২৫ সাল সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
তার মতে, সহমতের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন কঠিন হলেও সরকার আন্তরিক হলে এটি সম্ভব।
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সমন্বয়ে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে সময়মতো নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি একটি কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন সম্ভব।
তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে হবে।
সংকট নিরসনে রোডম্যাপের প্রয়োজন
সরকার এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেনি।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আলোচনা শুরু হবে বলে জানা গেছে।
তখনই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ হতে পারে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোডম্যাপের অভাব নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে সংকট নিরসনে।