,

জাতি ও ধর্মের বৈচিত্র্য নিয়েও আমরা এক পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ধর্ম ও মতের পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা সবাই একই পরিবারের অংশ।

তিনি এই মন্তব্য করেন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বিশেষ সংলাপে।

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই সংলাপে অংশ নেন বিভিন্ন ধর্মের নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, “আমাদের নানা মত থাকবে, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতি-নীতি থাকবে। এটাই পরিবার।”

“সব পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই,” যোগ করেন তিনি।

জাতীয়তা ও পরিচয়ের প্রশ্নে সবাই এক জায়গায় একত্রিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের সব অধিকার নিশ্চিত করার দায় রাষ্ট্রের বলে মনে করেন মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, “একটা দাবি আমাদের পরিষ্কার—আমাদের সবার সমান অধিকার।”

“বলার অধিকার, ধর্ম পালন করার অধিকার এবং কাজের অধিকার—এগুলো সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের প্রাপ্য,” বলেন তিনি।

এই অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা। আর আমাদের দায়িত্ব সংবিধানের নির্দেশনা নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।”

সম্প্রীতি রক্ষায় সংলাপ

প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের কাছে জানতে চান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

তিনি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মতামতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

সংলাপে অংশ নেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং কবি ও গবেষক ফরহাদ মজহার।

সংলাপে আরও যোগ দেন বায়তুল মোকাররমের খতিব আব্দুল মালেক এবং হেফাজতে ইসলামের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৌদ্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকও সংলাপে অংশ নেন।

সংলাপে কোনো ধর্মীয় সংগঠন বা রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন।

ধর্মীয় সম্প্রীতির টেকসই সমাধান

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংবিধান আমাদের সবার অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তিনি মনে করেন, নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়ানো সম্ভব।

ধর্মীয় নেতারা সংলাপে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার দিক তুলে ধরেন।

তারা জানান, রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে।

প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের মতামতকে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব দেবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় সবার সহযোগিতা অপরিহার্য।”

ধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

এই সংলাপ বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়তে পারেন