,

জাতিসংঘের প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা, তথ্য সরবরাহে দেরি করছে বাংলাদেশ

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে সমস্যার মুখে পড়েছে।

সরকার যথাযথ তথ্য সরবরাহ না করায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় দলটি।

তারা জানুয়ারির মধ্যভাগে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সরকারি তথ্য না পাওয়ায় প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে দু’দফা বাংলাদেশ সফর করে জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল।

তারা জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কাজ শুরু করে।

তবে, সরকারের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না পাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হয়েছে।

জাতিসংঘের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সরকার প্রথমে তদন্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিলেও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে অপারগতা দেখিয়েছে।

ফলে প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই অপারগতা তদন্তের স্বচ্ছতা এবং গোপনীয়তার প্রশ্ন তোলে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান স্বীকার করেছেন, তথ্য দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে।

তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।”

কবে এ তথ্য পাঠানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

জাতিসংঘ দল জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য অসম্পূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে তা সময়মতো সরবরাহ করা হয়নি।

নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রয়োজনীয় নথি এখনও অনুপস্থিত।

তদন্ত কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ

জাতিসংঘের দল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালা এবং আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে তদন্ত চালায়।

তারা জানায়, “তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমরা গোপনীয়তা বজায় রাখি এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করি।”

তদন্ত দল সেপ্টেম্বরে চার সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করে।

তারা বিভিন্ন জেলা সফর করে ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে।

তবে, সরকার নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়।

জাতিসংঘ দল ঢাকা সফরের সময় জানিয়েছিল, তারা নথি যাচাই এবং তথ্য বিশ্লেষণের পূর্ণ নিশ্চয়তা পেতে চায়।

তাদের দাবি, “তথ্য দেওয়া হয়েছে আংশিক এবং তা প্রাসঙ্গিক নয়।”

বাহিনীগুলোর ভূমিকা নিয়ে তথ্য গোপন

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভূমিকা নিয়ে তথ্য চেয়েছিল জাতিসংঘ।

তারা বাহিনীগুলোর নাম, দায়িত্ব এবং ব্যবহৃত অস্ত্রের বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল।

কিন্তু সরকার এই বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, বাহিনীগুলোর কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, “এই তথ্য বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে যাবে এবং দেশ গঠনের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।”

জাতিসংঘ আরও জানতে চেয়েছিল, আন্দোলনকারীদের ওপর বল প্রয়োগের মাত্রা, গ্রেপ্তার, এবং আটক কার্যক্রমের পদ্ধতি।

তারা দাবি করেছে, এসব তথ্যও আংশিক এবং অসম্পূর্ণ।

১৬ ধরনের তথ্যের দাবি

তথ্যানুসন্ধান দল সরকারকে ১৬ ধরনের তথ্য সরবরাহের জন্য বলেছিল।

এর মধ্যে নিহত এবং আহতের সংখ্যা, নাম, বয়স, লিঙ্গ এবং ধর্মভিত্তিক তথ্য ছিল অন্যতম।

তারা জানাতে চেয়েছিল, নিরাপত্তা বাহিনী কী ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে এবং নির্দেশনা কীভাবে দেওয়া হয়েছিল।

জাতিসংঘ দল আরও জানতে চেয়েছিল, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল এবং চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে নির্দেশনা কী ছিল।

তারা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ এবং সাংবাদিকদের ওপর নজরদারির বিষয়েও তথ্য চেয়েছিল।

তবে, এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য এখনও মেলেনি।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল জানায়, বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার সময় বাড়ানোর অনুরোধ করলেও নির্ধারিত নথি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তারা আশা করছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

আরও পড়তে পারেন