ঢাকার রাজপথে বিজয় দিবসে দেখা গেল জাতীয় নাগরিক কমিটির বড় আয়োজন।
১৬ই ডিসেম্বর বিকেলে বাংলামোটর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিশাল র্যালি বের করে সংগঠনটি।
মিছিলটি ছিল ঢাকার রাজনীতিতে সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের মতো।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে সদস্যরা এই র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং থানা থেকেও সমর্থকরা এসে র্যালিতে যোগ দেন।
বিজয় র্যালি উপলক্ষে বাংলামোটর এলাকায় কয়েক ঘণ্টা যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
র্যালির আগে নাগরিক কমিটির কোনো উল্লেখযোগ্য শোডাউন দেখা যায়নি।
তবে বিজয় র্যালি সংগঠনের পরবর্তী রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোকে সামনে আনতে স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে।
এই আয়োজনের মাধ্যমে নাগরিক কমিটি তাদের সংগঠন বিস্তৃতির ইঙ্গিত দেয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিজয় র্যালি একটি ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ।
সংগঠনটি বলছে, তাদের লক্ষ্য একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটানো।
নাগরিক কমিটির নেতা সামান্তা শারমিন বলেছেন, বিজয় র্যালি ছিল সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের একটি ধাপ।
তারা আরও বলছেন, ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে মজবুত করা হচ্ছে।
বিজয় র্যালির মতো আরও বড় কর্মসূচি সামনে আসবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
নতুন দলের কাঠামো, সময়সীমা ও প্রস্তুতি
জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারি ধরা হয়েছে।
শুরুতে দলটি গঠনের সময়সীমা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে সাংগঠনিক জটিলতার কারণে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শতাধিক কমিটি গঠন করেছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিক কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে।
এরপর ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠন বিস্তৃতির কাজ শুরু হবে।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে তৃণমূল কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেছেন, এই কর্মসূচি চলমান থাকলে দল গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।
অন্যদিকে, দল গঠনের কাজ কীভাবে চলছে তা জানতে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদরে নাগরিক কমিটির নেতা শওকত আলী বলেছেন, সাতটি থানার কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, থানা কমিটি সমন্বয় করে মহানগর কমিটি গঠন করা হবে।
মহানগরের অধীন প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত শুরু হবে।
গ্রাম পর্যায়ে কমিটি তৈরির মাধ্যমে সংগঠনের বিস্তার আরও দৃঢ় করা হবে বলে জানান তিনি।
নাগরিক কমিটির উদ্দেশ্য হলো প্রান্তিক জনগণের কাছে তাদের কার্যক্রম পৌঁছে দেওয়া।
এটি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তবে নাগরিক কমিটি সরাসরি দল হবে না বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তাদের দাবি, আলাদা নামে একটি দল তৈরি হবে, যেখানে নাগরিক কমিটির ভূমিকা থাকবে গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন দলের আদর্শ: মধ্যমপন্থা নাকি অন্য কিছু?
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দলটি একটি মধ্যমপন্থি আদর্শে পরিচালিত হবে।
তারা বামপন্থি কিংবা ডানপন্থি কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতির ধারায় যেতে চান না।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন, নতুন দলের প্রধান আদর্শ হবে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ।
তিনি বলেছেন, উগ্র ইসলামপন্থি কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শ থেকে দলটি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে।
আখতার হোসেন আরও বলেন, “আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, বৈষম্যহীন এবং মধ্যপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই।”
তাদের দাবি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন এবং বিদ্বেষের বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, দেশের মানুষের মধ্যে একটি নতুন দলের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, “জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দীর্ঘদিন ধরে দেখেছে। এখন তারা একটি নতুন শক্তির প্রয়োজন বোধ করছে।”
তাদের ধারণা, নতুন দলটি তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে উঠলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাবে।
তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা থাকবেন, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
যৌথ নেতৃত্বের ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে দল
নাগরিক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা একক নেতৃত্বের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চান।
তারা বলছেন, দলটি যৌথ নেতৃত্বের একটি কাঠামোতে পরিচালিত হবে।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, “আমরা এক নেতার এক দলের পুরনো ধারা থেকে দূরে থাকতে চাই।”
নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা, জনসমর্থন এবং আদর্শগত দৃঢ়তাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তাদের মতে, দলের ভেতরে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া হবে গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক।
আখতার হোসেন জানিয়েছেন, তারা চাচ্ছেন একটি এমন কাঠামো গড়ে তুলতে যেখানে দল পরিচালনা হবে সমন্বিত নেতৃত্বের মাধ্যমে।
তবে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে এখনো আলোচনা চলছে এবং তা তৃণমূল পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে হবে।
নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করেন, যৌথ নেতৃত্বের ধারণা বাংলাদেশে নতুন একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারে।
তাদের বিশ্বাস, এই পদ্ধতি দলে ভাঙন বা অভ্যন্তরীণ বিভাজন এড়াতে সাহায্য করবে।
ক্ষমতার লক্ষ্য: বিরোধী দল নাকি সরকার?
নতুন রাজনৈতিক দলটি গঠিত হলে তাদের প্রধান লক্ষ্য কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নাগরিক কমিটির নেতারা বলেছেন, তাদের প্রথম লক্ষ্য হবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান নেওয়া।
তারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব রয়েছে।
আখতার হোসেন বলেছেন, “আমরা সরকার গঠনের চেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি দল গড়ে তোলা, যা দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।”
তবে দলটি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই তাদের প্রধান রাজনৈতিক কৌশল।
তাদের ধারণা, প্রথম নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ধীরে ধীরে জনগণের সমর্থন বাড়ানো হবে।
নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে দলটি ধীরে ধীরে বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
তাদের ভাষায়, “ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হবে, তবে তা সময় সাপেক্ষ।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে নতুন দলের জন্য জনসমর্থন পাওয়া কঠিন।
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মতো প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বিপক্ষে টিকে থাকতে নতুন দলকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
নাগরিক কমিটি আশা করছে, তরুণ প্রজন্ম এবং জনগণের মধ্যকার তাদের গ্রহণযোগ্যতা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
তারা বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন দলের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।