চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে রাষ্ট্রপক্ষের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।
আদালত জানিয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ ঘটনা তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি শুনে তারা আশ্বস্ত।
চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নৃশংসভাবে নিহত হন।
হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে।
৩৩ গ্রেফতার, ৭৬ আসামি, তিনটি মামলা
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে।
একটি মামলায় ১৩ জন, অন্যটিতে ১৪ জন এবং আরেকটিতে ৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ ইতোমধ্যে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছয়জনকে সরাসরি শনাক্ত করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।
তিনি আদালতকে জানান, শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
সরকার এ ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

হাইকোর্টের সন্তোষ প্রকাশ
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে হাইকোর্ট সন্তোষ প্রকাশ করে।
আদালত জানায়, সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বের প্রতিশ্রুতি তাদের আশ্বস্ত করেছে।
বিচারপতিরা বলেন, “রাষ্ট্র এ বিষয়ে যা করার তা করছে, এটাই তাদের দায়িত্ব।”
তারা আরও বলেন, “আমরা সংবিধানের অভিভাবক। আইনের মধ্যে থেকেই জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করব।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের তৎপরতা যেন অব্যাহত থাকে।
আদালত জানিয়েছেন, রাষ্ট্র যদি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, আদালতের আলাদাভাবে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ও সরকারের নীরবতা
সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের পর ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে।
একজন আবেদনকারী আইনজীবী আদালতে ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “বিশ্বের ১০টি দেশে ইসকন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম দিন দিন উগ্র হয়ে উঠছে।”
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান বা পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
আদালতও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি।
আইনজীবী মনির উদ্দিন আদালতকে জানান, ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদনকে কেন্দ্র করে দেয়া হয়েছিল।
হাইকোর্ট বলেন, “রাষ্ট্র এ বিষয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, তারা সংবিধান মেনেই কাজ করবে।”
আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান একটি সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবীদের সুরক্ষার দাবি জানান।
তিনি ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, “দেশে আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
আইনজীবী হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বানও জানান তিনি।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু না হলে তাদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে আরও শঙ্কা তৈরি হবে।
আইনজীবীরা ইতোমধ্যে সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এবং চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারের পদক্ষেপ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে তৎপর রয়েছে।
চট্টগ্রামের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ নিয়ে গভীর তদন্ত চলছে।
সরকার বলছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সরকার বিষয়টিকে টপমোস্ট প্রায়োরিটি দিয়ে দেখছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।”
হাইকোর্ট রাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে সন্তোষ জানিয়ে বলেছে, “কোনো ফাঁকফোকর রাখা যাবে না। সব পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী হতে হবে।”