দেশজুড়ে গ্যাস সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলার মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
তিতাস গ্যাসের গ্রাহকরা বলছেন, দিনে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
এতে রান্না-বান্না কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
কেউ মধ্যরাতে উঠে রান্না করছেন, কেউবা সিলিন্ডার গ্যাস বা কাঠের চুলায় নির্ভর করছেন।
ভাড়াটিয়াদের চাপ সামলাতে বাসার মালিকরা অনেকেই বাধ্য হয়ে এলপিজি লাইন বসাচ্ছেন।
তাতে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগসহ বহু এলাকায় গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত চুলায় সামান্য গ্যাস আসে।
এর ফলে বাসিন্দাদের অফিস বা স্কুলে যাওয়ার আগেই রান্না সেরে নেওয়ার সময় পাচ্ছেন না।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরবরাহ ঘাটতির পাশাপাশি শীতকালে লাইনে জমে থাকা কনডেনসেট গ্যাসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।
শিল্পকারখানায় উৎপাদন কার্যত অচল
গ্যাস সংকট দেশের শিল্পখাতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
বিশেষত গার্মেন্টস, সিরামিকস এবং স্টিল খাত এই সংকটের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, গার্মেন্টস খাতের উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ ২ পিএসআইয়ের নিচে নেমে গেছে।
গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার সময়মতো সরবরাহ করতে পারছেন না তারা।
এতে দেশের রপ্তানি খাতে সুনাম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, সিরামিকস এবং স্টিল খাত ডিজেল ব্যবহারে নির্ভর করছে, যার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
একজন শিল্প মালিক বলেছেন, “প্রতি টন রড উৎপাদনে খরচ বেড়েছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।”
সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও যানজট
গ্যাস সংকট সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোকেও বিপর্যস্ত করেছে।
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের জন্য গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।
এই লাইনের কারণে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
গ্যাস নিতে অনেক গাড়িচালককে ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ফিলিং স্টেশনের মালিকরা বলছেন, গ্যাসের স্বল্পতায় তারা স্টেশনগুলো পুরোপুরি চালু রাখতে পারছেন না।
অনেক ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, যেসব গাড়ি গ্যাস পায় না, সেগুলো বিকল্প হিসেবে পেট্রোল বা অকটেন ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে।
সংকট সমাধানে কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, মহেশখালীর একটি ভাসমান রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট মেরামতের জন্য বন্ধ ছিল।
গত সপ্তাহে এটি চালু হওয়ায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে।
তবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে।
এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সংকট কাটাতে সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে।