,

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের ক্ষোভ

পেট্রোবাংলার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে দেশের শিল্পখাতের নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাদের মতে, এ প্রস্তাব কার্যকর হলে শিল্প সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

পেট্রোবাংলা নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।

শিল্পমালিকরা অভিযোগ করেছেন, এ প্রস্তাব অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে।

তাদের আশঙ্কা, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।

শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত: কর্মসংস্থানের সংকটের আশঙ্কা

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন,

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে দেশে নতুন কোনো শিল্প স্থাপন সম্ভব হবে না।

যেসব শিল্প ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোও টিকে থাকতে সমস্যায় পড়বে।

রাসেল আরও বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ফেব্রিকের দাম হ্রাসের কারণে টেক্সটাইল খাত ইতোমধ্যেই সংকটে রয়েছে।

এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যা টেক্সটাইল শিল্পের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

শ্রমজীবী মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হলে দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হবে বলে মনে করেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত

ব্যবসায়ী নেতারা পেট্রোবাংলার এই প্রস্তাবকে অসময়োপযোগী এবং একপাক্ষিক বলে অভিহিত করেছেন।

বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন,

আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না হওয়া সত্ত্বেও কেন দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, নতুন উদ্যোক্তারা যদি বেশি দামে গ্যাস কিনতে বাধ্য হন, তাহলে তারা শিল্পায়নে আগ্রহ হারাবেন।

ফলে পুরোনো শিল্প মালিকরা অসম প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হবেন।

রপ্তানিমুখী খাতের সংকট আরও বাড়বে

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানিমুখী খাত।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন,

পোশাক খাত বর্তমানে আইসিইউতে আছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি জানান, শ্রমিক অসন্তোষ ও অন্যান্য সংকটের কারণে এই খাত ইতোমধ্যে চাপে রয়েছে।

এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

অর্থনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেছেন,

গ্যাসের উচ্চমূল্য এবং সস্তা শ্রমের অভাবের কারণে দেশে শিল্পায়ন ইতোমধ্যে ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, যদি সরকার উৎপাদনমুখী অর্থনীতি থেকে আমদানি নির্ভর অর্থনীতির দিকে যেতে চায়,

তাহলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, গ্যাসের দাম নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

তারা আরও দাবি করেন, পেট্রোবাংলা এবং তিতাসের মতো সংস্থাগুলোর মুনাফার প্রয়োজন নেই,

বরং তাদের সেবা প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করা উচিত।

আরও পড়তে পারেন