,

গণপিটুনি থামছে না: আইনের শাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দায়ী

দেশজুড়ে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েই চলেছে।

অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৮২ জন নিহত হয়েছেন।

জনগণের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে গভীর উদ্বেগজনক।

গণপিটুনিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গণপিটুনির শিকার হয়ে অগস্ট মাসে ২১ জনের মৃত্যু হয়।

সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮-এ।

অক্টোবরে ১৯ জন এবং নভেম্বরে ১৪ জন প্রাণ হারান গণপিটুনিতে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৩ জন গণপিটুনিতে মারা যান।

আসকের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন মোট ৫১ জন।

২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৬, ২০২১ সালে ২৮ এবং ২০২০ সালে ৩৫।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৬৫।

সর্বশেষ ঘটনা: চট্টগ্রামে রুবেলের মৃত্যু

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩০ বছর বয়সী রুবেল হোসেন।

স্থানীয়রা তাকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।

পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

রুবেলের স্ত্রী কাজলী আক্তার বলেন, তার স্বামী দিনমজুর এবং কখনো সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন।

কাজলী জানান, তার স্বামী নির্দোষ ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘যদি দোষীও হতেন, তাহলেও তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত ছিল। আইনই নির্ধারণ করত তার অপরাধ।’

এই ঘটনার পর তিনি তার ছয় বছরের ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন।

বিচারহীনতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি

মানবাধিকারকর্মী মোহাম্মদ নূর খান লিটন বলেন, গণপিটুনির ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দায়ী।

তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও জনসাধারণের হারানো আস্থা ফিরে পায়নি।

জুলাই-অগস্টে ছাত্র আন্দোলনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে গণপিটুনির ঘটনা বন্ধ হবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, কঠোর পদক্ষেপ না নিলে গণপিটুনির সংস্কৃতি সমাজে শিকড় গেড়ে বসবে।

তিনি জানান, ‘গণপিটুনি আইনের শাসনের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং অপরাধীদের শাস্তি এড়ানোর প্রবণতার সঙ্গে সম্পর্কিত।’

পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর বলেন, গণপিটুনি ঠেকাতে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দেশজুড়ে টহল এবং চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, সন্দেহভাজন অপরাধীদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তিনি সতর্ক করেন যে, ‘যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তবে তাকেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’

আরও পড়তে পারেন