,

ইসরায়েলের সিরিয়ায় বিমান হামলা: রাসায়নিক অস্ত্র কেন্দ্রসহ একাধিক টার্গেট ধ্বংস

সিরিয়ায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান একের পর এক হামলা চালিয়েছে।

সিরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই হামলা পরিচালিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলছে, ইসরায়েলি বিমান অন্তত একশ জায়গায় হামলা চালিয়েছে।

হামলার অন্যতম টার্গেট ছিল রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা কেন্দ্র।

এসওএইচআর জানিয়েছে, এই গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি ইরানের বিজ্ঞানীদের রকেট উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত একটি স্থানেও হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র সতর্কতা ও ইসরায়েলের অবস্থান

জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ওপিসিডব্লিউ সতর্ক করেছে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ নিয়ে।

এই সংস্থা বলছে, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তারা জানিয়েছে, এমনকি সামরিক স্থাপনায় এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারও বিপজ্জনক।

সিরিয়া ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র সনদে স্বাক্ষর করলেও, তখন তাদের মজুদ ঘোষণায় অস্পষ্টতা ছিল।

২০১৩ সালের গুতার নার্ভ এজেন্ট হামলায় ১৪০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।

ওই ঘটনায় আসাদ সরকার ও বিদ্রোহীরা একে অপরকে দায়ী করেছিল।

অপিসিডব্লিউ’র তথ্যমতে, সিরিয়া তাদের রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করলেও এরপরও হামলার ঘটনা থেমে থাকেনি।

সিরিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ ও নেতানিয়াহুর ঘোষণা

ইসরায়েল বলছে, আসাদ সরকারের পতনের পর অস্ত্র যেন উগ্রপন্থীদের হাতে না যায়, তা নিশ্চিত করতে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল গোলান উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

তিনি একে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি “ঐতিহাসিক দিন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গোলান উপত্যকা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলে আসে, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি মেলেনি।

নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ইসরায়েলের লক্ষ্য।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।

বিদ্রোহীদের উত্থান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) দখলে গেছে।

এইচটিএস নেতারা দামেস্ককে “মুক্ত” ঘোষণা করেছে এবং নতুন শাসনব্যবস্থা চালুর কথা বলেছে।

বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে প্রেসিডেন্ট আসাদের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটেছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

হেজবুল্লাহ ও ইরানের সঙ্গে সংঘাতের সম্পর্ক

সিরিয়ায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাগুলো ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল।

গাজা যুদ্ধের পর সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসওএইচআর বলছে, গত মাসে পালমিরার কাছে ইরান সমর্থিত যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালায়।

এসব হামলায় ৬৮ জন সিরিয়ান এবং বিদেশি যোদ্ধা নিহত হয়।

হেজবুল্লাহ এবং ইরানের উপস্থিতি সিরিয়ায় ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন