শেখ হাসিনা
, ,

আওয়ামী লীগ তৃণমূলে বিপর্যস্ত: শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠক প্রাসঙ্গিক

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে এক গভীর সংকটে পড়েছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত দলের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে। কোথাও ভাঙা অফিস, কোথাও জনমানবশূন্য প্রাঙ্গণ—এই চিত্রই এখন প্রায় সর্বত্র।

কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই বৈঠক কীভাবে দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, তা নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

মুন্সিগঞ্জের তৃণমূল: অফিসে তালা, নেতারা অদৃশ্য

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের বর্তমান অবস্থা দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘোড়দৌড় বাজারের পাশে অবস্থিত এই অফিস একসময় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকত।

এখন সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। মূল ফটকে ঝুলছে তালা। অফিসের ভেতরে পড়ে আছে ভাঙাচোরা আসবাবপত্র। আশেপাশের লোকজন জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম হয়নি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা অহিদুল ইসলাম বললেন, “এখানে আগে প্রচুর লোক আসতো। এখন কেউ আসে না। নেতারা পালিয়ে গেছে।”

এমনকি স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের অনেকেই ঢাকায় বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ কারাগারে আছেন, আবার কেউ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

সারা দেশে একই চিত্র: নেতাদের খোঁজ নেই

মুন্সিগঞ্জের মতো দেশের অন্যান্য এলাকাগুলোতেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠন এখন প্রায় অচল। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনার মতো প্রধান শহরগুলোতেও দলীয় অফিসগুলো কার্যত জনশূন্য।

তৃণমূলের অনেক নেতাই জানিয়েছেন, তারা দলের কোনও দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। এক ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা, তোরাব আলী (ছদ্মনাম), বললেন, “সবাই তো আছি দৌড়ের ওপর। দলের কাজ-কর্ম নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নাই। কারও সঙ্গেও যোগাযোগ হয় না।”

তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপরই নয়। তারা তাদের দলের ভেতরের দুর্নীতিবাজ নেতাদের প্রতিও অসন্তুষ্ট। তোরাব আলী বললেন, “যারা দুর্নীতি করেছে, ওদের জন্যই আজ আমাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।”

শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল মিটিং: ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের ভঙ্গুর সাংগঠনিক কাঠামো মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

এর আগেও শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় টেলিফোনের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব ফোনালাপ দলের নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তবে এটি হবে তার প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক, যেখানে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম জানিয়েছেন, “নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি চায়। ধাপে ধাপে কর্মসূচি দিয়ে দলকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হবে।”

বিশ্লেষকদের মত: জনগণের মুখোমুখি হওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জনগণের সামনে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা।

রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাদের বার্তা কী হবে এবং জনগণ সেই বার্তা কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।”

তিনি আরও বলেন, “দলটি এখন রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ না হলেও গণহত্যার অভিযোগ এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণের আস্থা অর্জন করা হবে তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী ক্ষোভ তাদের পক্ষে আসতে পারে। তবে রাজনীতির এই জটিল সমীকরণ আওয়ামী লীগের জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আরও পড়তে পারেন