,

আইসিটি প্রকল্পে শতকোটি টাকা লোপাট: শিক্ষার্থীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত

সারা দেশে ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে আইসিটি প্রকল্প শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।

এর আওতায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, প্রশিক্ষণ কক্ষ এবং ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরির পাশাপাশি ১৩ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।

সরকারের তথ্যমতে, ৩৬ হাজার ৮৪টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ পেয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ ২১ হাজার শিক্ষক।

তবে প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও দেশের সাড়ে আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং ব্যানবেইসের সর্বশেষ তথ্যে উঠে এসেছে, প্রায় তিন হাজার ৮৫৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও কম্পিউটার ল্যাব নেই।

এছাড়া, যেসব জায়গায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে, সেখানেও নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

কোটি টাকার দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট

আইসিটি প্রকল্পের বিপুল অর্থ ব্যয়ের মধ্যে ৯৬ কোটি টাকার দুর্নীতি এবং আরেকটি প্রকল্পে ৭৭ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ পায়।

এছাড়াও ১৬০ উপজেলায় ডিজিটাল ক্লাসরুম প্রকল্পের নাম করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সাব-ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ভুয়া কাজ দেখিয়ে টেন্ডার জালিয়াতি করেছেন।

অভিযোগ অনুসারে, রাজনৈতিক সিন্ডিকেট এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে।

প্রকল্পের সরঞ্জাম সরবরাহে মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়।

একজন সাবেক প্রকল্প পরিচালক জানান, সরবরাহকৃত সামগ্রীর মান এতটাই খারাপ ছিল যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা

আইসিটি বিষয়টি ২০১২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমে বাধ্যতামূলক করা হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি।

দেশের ২৩ হাজার ৭৮৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ জায়গায় নেই ডেডিকেটেড শিক্ষক।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই।

কম্পিউটার ল্যাবের অভাব রয়েছে আরও তিন হাজার ৮৫৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, বিষয়টির জন্য আলাদা শিক্ষক না থাকায় অন্যান্য বিষয় পড়ানো শিক্ষকদের আইসিটি ক্লাস নিতে হচ্ছে।

এ কারণে আইসিটি একটি ব্যবহারিক বিষয় হয়েও মুখস্থবিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।

সংসদীয় আলোচনা এবং তদন্ত প্রতিবেদন

আইসিটি প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে তদন্তে দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়।

তবে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্ত্রিপর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ ওঠার পরও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রীর সিন্ডিকেট তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বদলি করায় তদন্ত কার্যক্রম থমকে যায়।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, বিগত সময়ে শিক্ষাখাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, যা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়তে পারেন