ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে অমিত শাহর বক্তব্যকে অত্যন্ত শোচনীয় ও আপত্তিকর উল্লেখ করে ঢাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারকে একটি নোট হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অমিত শাহর বক্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়া
অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় বলেন, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পা ওপরের দিকে ঝুলিয়ে রেখে সোজা করা হবে।” তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে এবং এদের অবিলম্বে বের করে দেওয়া হবে। তিনি অভিযোগ করেন, ঝাড়খণ্ডে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং ঝাড়খণ্ডের জনগণ সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে।
এ ধরনের বক্তব্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির নেতারাও এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, “ঘৃণা ছড়াবেন না, নয়তো বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ উল্টো ঝুলিয়ে দেবে।”
বাংলাদেশের তীব্র প্রতিবাদ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের মন্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করে। ঢাকায় ভারতের উপহাইকমিশনার পবন ভাদের কাছে পাঠানো প্রতিবাদপত্রে বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে যে, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তির এই ধরনের মন্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
দুই দেশের সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
ভারত ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই কিছু রাজনৈতিক মন্তব্য বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। অমিত শাহর সাম্প্রতিক মন্তব্যও এর একটি উদাহরণ। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষত, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য এসব সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন উদ্বেগের প্রকাশ একেবারেই যৌক্তিক।