, ,

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সিদ্ধান্ত: প্রশাসনে উত্তাপ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যালোচনা কমিটি সম্প্রতি জনপ্রশাসনের সাড়ে সাতশো সাবেক কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করেছে।

এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা।

বিশ্লেষকরা এই সিদ্ধান্তকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির পটভূমি

গত ১৬ই সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার বঞ্চিত সাবেক কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল।

এই কমিটি গত মঙ্গলবার তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, যেখানে ৭৬৪ জন কর্মকর্তার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিটির প্রধান সাবেক সচিব ড. জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, আবেদনকারীদের চাকরি জীবনের বঞ্চনা এবং সামাজিক ও আর্থিক ভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে এই সুপারিশ করা হয়েছে।

আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন সচিব থেকে শুরু করে উপসচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা।

কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যারা পদোন্নতির সুযোগ পাননি বা বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন, তারাই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

এটি বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে যাচ্ছে।

আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন

এই ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধাও দেয়া হবে কি না, তা এখনো সরকার স্পষ্ট করেনি।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান এই প্রশ্ন তুলেছেন যে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতি পাননি, তারা কীভাবে ওই সময়ের আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন।

তিনি বলছেন, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রয়োজন থাকলেও এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভবিষ্যতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

আবার, বিশ্লেষক ফিরোজ মিয়া মনে করেন, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া তাদের সামাজিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তার মতে, সৎ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের আবেদন বিবেচনা করলে এটি প্রশাসনে পেশাদারিত্ব বাড়াতে সাহায্য করবে।

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিমত

বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের আবেদনে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং অন্যায্য আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।

উদাহরণ হিসেবে, একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন যে তার ব্যাচের মেধা তালিকায় নিচে থাকা ২১ জন সচিব পদে উন্নীত হলেও তিনি পাননি।

আরেকজন যুগ্ম সচিব হিসেবে পাঁচবার পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির দাবি করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যারা অতীতে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের সুযোগ দেয়া হলে তা প্রশাসনিক সুশাসনের উদাহরণ হতে পারে।

প্রশাসনিক শৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ

সাবেক সিনিয়র সচিব শহীদ খান মনে করেন, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কার্যকর করতে হবে।

তার মতে, সরকারকে সৎ, যোগ্য এবং নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের বাছাই করতে হবে, অন্যথায় এই উদ্যোগ প্রশাসনের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেজুড়বৃত্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে এই ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, ভবিষ্যতের সরকারগুলো যেন এটি উদাহরণ হিসেবে অপব্যবহার না করে।

আরও পড়তে পারেন