ড. মুহাম্মদ ইউনূস
,

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩ উপদেষ্টা নিয়ে সমালোচনা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।

উপদেষ্টা পরিষদের ২৪ জন সদস্যের মধ্যে ১৩ জনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে হওয়ায় অন্যান্য অঞ্চল থেকে এই বৈষম্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

এই ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিভাগের পাশাপাশি বরিশাল ও খুলনা বিভাগে শুধুমাত্র একজন করে উপদেষ্টা থাকলেও রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের কেউ উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হননি।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এবং উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

সারজিস আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা; অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নেই।”

তিনি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রভাবশালী উপদেষ্টারা এবং বিতর্কিত নিয়োগ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়।

এছাড়া, শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বাড়িও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হলেও তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা।

যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ারও মূল নিবাস কুমিল্লায়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সন্দ্বীপের অধিবাসী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে।

ঢাকা বিভাগের প্রভাবশালী উপদেষ্টারা এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা

ঢাকা বিভাগের সাত জন উপদেষ্টা থাকলেও তুলনামূলকভাবে চট্টগ্রামের তুলনায় তাদের সংখ্যা কম।

তবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা বিভাগের উপদেষ্টারা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নরসিংদীর এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মুন্সীগঞ্জের অধিবাসী।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ঢাকা জেলার বাসিন্দা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীও ঢাকার।

ঢাকা বিভাগের এই উপদেষ্টাদের নিয়োগে কিছুটা আঞ্চলিক ভারসাম্য আনার চেষ্টা হলেও উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের উপেক্ষিত হওয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জনমনে প্রতিক্রিয়া

আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেশের নানা অঞ্চল থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এই বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

বিভিন্ন বিভাগ থেকে নির্বাচিত উপদেষ্টা পরিষদে সমস্ত অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দাবি তুলেছে তারা।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. নূরুল আমীন বেপারী মন্তব্য করেছেন, “এমন আঞ্চলিক বৈষম্য সরকারের দক্ষতা ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।”

আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সরকারি উপদেষ্টা পরিষদে এই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা এবং সমতাভিত্তিক প্রতিনিধি নিশ্চিত করা সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সব অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধি থাকা দরকার যাতে সবার কণ্ঠস্বর শোনা যায়।

দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিভাবে আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে তা ভবিষ্যতে একটি প্রধান বিষয় হিসেবে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন