মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আবারও বদলাতে পারে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা।
প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলা হবে।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ‘যুদ্ধ সহায়ক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।
জামুকার সূত্র জানায়, নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধার বয়সও পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর ৬ মাস হলেও এটি বাড়িয়ে ১৩ বছর করা হতে পারে।
এ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯১তম সভায়।
মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান ও প্রস্তাবিত সংজ্ঞা
বর্তমান সংজ্ঞায় রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সহায়তাকারী গোষ্ঠীকেও মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরাও মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পেয়ে আসছেন।
প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞায় এই বিস্তৃত গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা আলাদা শ্রেণিতে ফেলতে চাওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে এসব পেশার প্রতিনিধিদের।
এতে রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা আরও সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, বর্তমান সংজ্ঞা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
তিনি বলেন, “যারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তারা চান আলাদাভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হতে।
অন্যদিকে, যুদ্ধ সহায়কদের ভাতার বিষয়েও কোনো আপত্তি নেই।”
খসড়া সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল জায়গায় রয়েছে মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।
প্রস্তাবিত সংজ্ঞা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে যাচাই-বাছাই শেষে উপদেষ্টা পরিষদে।
মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নির্ধারণের পরিবর্তন
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ বছর ৬ মাস।
২০১৮ সালে এক পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যার বয়স ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন।
তবে নতুন প্রস্তাবে মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এছাড়া বয়স নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে ৩০ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৬ মার্চকে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অনেক মুক্তিযোদ্ধা মনে করেন, বয়স পরিবর্তন করলেও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সহজ হওয়া উচিত।
মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নিয়ে মতবিরোধ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা নতুন সংজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, “৫৩ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে যাতে তারা হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, “স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সবাই মুক্তিযোদ্ধা।”
তিনি বলেন, “যুদ্ধ সহায়ক গোষ্ঠীরও অবদান রয়েছে, তবে রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের মর্যাদা আলাদা।”
নতুন সংজ্ঞার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধ সহায়কদের ভূমিকা আলাদা করাই মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছে জামুকা।
তবে এটি কার্যকর হলে বিতর্ক নিরসন হবে নাকি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।